বাংলা নাম:
বড় শ্যামাঘাস, ডালঘাস,
গোবরা, ঝটঘাস, শ্যামা।
বর্ণনা:
দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে
এটা ধান ফসলের একটা বহুল বিস্তৃত ঘাস। এটা বর্ষজীবি, বলবান, গুচ্ছাকৃতি
মাড়াবা
অধর্বগ্র, কখনো কখনো পর্বসন্ধি থেকে মূল বা শাখাবের হয়। যা গাছের গোড়ার
দিকে
থাকে। এরা ১মি: পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পুরো গাছ লোমশ এবং সবুজ থেকে
নীলাভ।
পাতা ১.৫cm প্রশস্থ ধার ঢেউ খেলানো। পুষ্পণমঞ্জুরী খাড়া শেষ পাতা পর্যন্ত
বিস্কৃত। ০.৫- ৫০ cm লম্বা সবুজ বা বেগুনী দাগ পরিলক্ষিত হয়। লিগিউলের
অনুপস্থিতি
এবং অনুক্রম অনুসারে সাজানো অসংখ্য পুস্পমঞ্জুরী এই আগাছার একটা পৃথকীকরণ
বৈশিষ্ট্য।
জীবনবৃত্তান্ত:
এই
আগাছার জীবনচক্র সম্পনন্নকরতে ৪২-৬৪ দিন সময় লাগে। বীজ দ্বারা এরা
বংশবিস্তার ও
বিস্তৃতি লাভ করে যা ধানের বীজের সঙ্গে মিশে ছড়ায়। প্রতি গাছে বীজের
সংখ্যা ২০০০
থেকে ৪০০০ পর্যন্ত হতে পারে। কিছু বীজ ফসলকাটার পর পর অংকুরিত হয়। আবার
কিছু বীজ ৪
থেকে ৪৮ মাস পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। সূর্যালোকের দীর্ঘতম
সুপ্তবীজের
সংখ্যা এবং সুপ্ততার নীবিরতা প্রভাবিত করে। সারা বছরই ফুল ও ফল ধরে।
পরিবেশ ও
বিস্তৃতি:
Echinochloa
erusgallc একটা সার্বভৌমিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি আগাছা।
দক্ষিণ ও
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে এটা ধানের খুবই সুবিস্তুত একটা আগাছা। উক্ত বণলীয়
এশিয়াতে এর
জন্ম। বর্তমানে এটা উষ্ণমন্ডলীয় এবং অবউষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে বিস্তার লাভ
করেছে এবং
৫০0N থেকে 40S পর্যন্ত বিস্তুত। এই আগাছার ব্যাপক
বিস্তৃইত
ও আক্রমনাত্বক স্বভাব এর দ্রুত বৃদ্ধি অধিক বীজ উতপাদন স্বল্প বীজ
সুপ্ততা, এবং মাঠের
বিভিন্ন অবস্থায় এর খাপ খাওয়ানোকে ত্বরান্বিত করে। নিম্ন ও মধ্যম দৈহিক
অবস্থানে
এই আগাছা পাওয়া যায়। তবে উন্মুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল জায়গা ও ভেজা মাটি বেশী
পছন্দ করে
এবং আংশিক নিমগ্ন অবস্থায় ও তাদের বৃদ্ধি অব্যহত রাখতে পারে। জলাভুমি ও
জলাশয়ের
এটা একটা সাধারণ আগাছা। শুষ্কক মাটিতেও এরা জন্মাতে পারে। তবে সেক্ষেত্র
গাছ খাট ও
কুশি পেনিকেল ও বীজের সংখ্যা কম হয়। বেলে ও দোআশ মাটিতে এদের বৃদ্ধি ভাল।
বিশেষ
করে যেখানে নাইট্রোজেনের পরিমান বেশি।
ক্ষতি কারক
বৈশিষ্ট্য:
এই
আগাছা এবং ধানের পরিবেশগত চাহিদা একই। প্রাথমিক পর্যায়ে আগাছাটি ধানের মতই
দেখায়
এবং যেখানেই ধানের চারা লাগানো হয় সেখানে প্রায় ১০% এই আগাছার উপস্থিতি
লক্ষ্য
করা যায়। বোনা ধানে এই আগাছা প্রায় একই সময়ে অংকুরিত হয় (৫-৬দিন)। কারণ
সারা
মৌসুম ধরে এই আগাছা অংকুরিত হয় এবং নতুন শাখা ও কুশি জন্ম দেয়। সারি ফসলে
এই আগাছা
দ্রুত অংকুরিত ও জন্মতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে এই আগাছার ব্যাপক
উপস্থিতি শতকরা
৬০-৮০ ভাগ নাইট্রোজেন মাটি থেকে শোষন করতে পারে।
আগাছা
ব্যবস্থপনা:
জৈবিক:
Echinochloa erusgallc অনেক ধরনের পোকা, ছত্রাক ও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত
হয়। The
North America Weevil (Listronotus humilis) কে জৌবিক দমন হিসেবে ব্যবহার
করা যায়।
এই পোকার লার্ভা আগাছার নতুন বধিষ্ণু অংশ ও কচি কলা খেয়ে থাকে।
রাসায়নিক
দমন:
ভারতে
ধান ফসলে Buta Chlor @1.5 g/ha, Anllophos
@ 800 g/ha, Pretilachlor
@ 1. 0
kg/ha, অংকুর পূর্ব প্রয়োগ করে এই
আগাছা দমন করা যায়। পাকিস্তানে ধান ফসলে Machete 60EC, Argold 10EC acetor
50 EC
ধানের চারা রোপনের ৩-৫ দিন পর স্প্রে করে এ আগাছা দমন করা হয়।
উদ্ভিদ
সংক্রান্ত তথ্য:
স্বভাব:
শক্তিশালী গুচ্ছ বর্ষজীবি ঘাস।
মূল: গোড়ায়
গুচ্ছ ও অস্থানিক মূল।
কান্ড:
কান্ড খাট, খাড়া, ১.৫মি: লম্বা বা
শুয়ানো সিলিন্ডারাকৃতি, নরম, সাদা তুলতুলে পিথযুক্ত। কামের নিচের
পর্বসন্ধি থেকে
মূল ও শাখা প্রশাখা বের হয়।
পাতা:
পত্রফলক রৈখিক, পত্র খোলের সাথে
মিশে গোড়া প্রশস্ত এবং শীর্ঘভাগ চিকন, গোড়ায় নরম অল্প লোম থাকে। উপরের
দিকে
কিছুটা নরম, ৫-৩০ cm লম্বা, এবং ৫-২০cm পর্যন্ত প্রশস্থ। পত্র খোল ৯-১৩cm
লম্বা
নরম, কিনারা বা খোলা অংশ লম্বা লোম দ্বারা সীমাবদ্ধ, লিগিউল অনুপস্থিত।
পুস্পমঞ্জুরী:
পেনিকেল খাড়া বা
পর্বসন্ধিযুক্ত। সবুজ বা বেগুনী ৫-২০ cm লম্বা। পত্রক অক্ষ (Rachis) খাট,
পর্বসন্ধি কখনো কখনো শাখাম্বিত। পুষ্পিবন্যাস অসংখ্য (৫-৪০), ২-৪ cm
লম্বা,
(কখনো কখনো ২-১০cm), বিস্তত ছোট থেকে বড় অনুক্রমে সাজানো, কখনো
শাখাম্বিত,
স্পাইকলেট জটপাকানো ৩-৪cm লম্বা শুংছাড়া বাকীটা আংশিক লেমেক। শুংআছে
সাধারণত
লালচে বা বেগুনী ৫-১০cmলম্বা। প্রথম গ্লুম স্পাইকলেট বরাবর বিভাজিত
দ্বিতীয় গুল্ম
এবং বন্ধ্যা লেআমা শিরায় ছোট ছোট লোমযুক্ত।
ফল:
ক্যারোওপসীস অভেট স্থূল সংকোচিত
বাদামী, উত্তর তলে লম্বালম্বি বিজ থাকে।